============================================
আবার এসেছে ডিসেম্বর। বিজয়ের মাস।
১৯৭১-এর ডিসেম্বর ছিল ঘর ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া বীরযোদ্ধাদের সদর্প গৃহ
প্রত্যাবর্তনের মাস। শত্র“র
রাহুগ্রাস থেকে অবরুদ্ধ মাতৃভূমির মুক্ত হওয়ার মাস। মু্িকতপাগল বাঙালি ওএ মাসেই পেয়েছিল
চূড়ান্ত বিজয়ের সংকেত। যুদ্ধের প্রতিটি অগ্রগতিতে খুঁজেছে তারা রুদ্ধশ্বাস
প্রতীক্ষার অবসনের সংবাদ, মুক্তির আনন্দ। ঋতুচক্রের সতত নিয়মে একটি মাত্র মাসের
পুনরাগমন নয় ডিস্মেবরের এই ফিরে আসা। বাঙালির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমস্ত অর্জনের এ
মাস স্বয়ং এক ইতিহাস। বিজয়ের মাসটিতে তাই বাঙড়ালি স্বরণ করে তার বীরত্ব, গৌরব ও
আত্মদারেন মহাপুরাণ; মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বনি নিয়ে চেগে ওঠে নতুন প্রয়্যায়ে। ১৯৭১
সালে এক সাগর রক্তে ম্লান করে যে রাষ্ট্রের উত্থান হয়েছিল, তার বয়স এখন ৩৮ বছর।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, বাধা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের প্রাচীর ডিঙিয়ে আবারও গণতন্ত্রের
রথে আসীন হয়েছে বাংলাদেশ। দু’বছরের
অনিশ্চয়তা, অনির্বাচিত সরকারের ‘জরুরি’ শাসনের পর সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য
দিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে মুক্তিুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ। এবারের ডিসেম্বর
আগের যে কোনো ডিসেম্বরের চেয়ে অন্য রকম। ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা
নিয়ে নির্বাচনের জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তাদের এই জয়ের সঙ্গে ডিস্মেবরের একটি সংযোগ
আছে বরে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশেক্ষসে কেউ কেউ মনে করতেন, নতুন
প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আবেদন ফিকে হয় এসেছে। বুঝিরা ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল
ঘটনা বিস্মৃত হেেছ নতুন প্রজন্মের মানুষ। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়
যুদ্ধাপরাধীমের বিচারের দাবিতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামে আন্দোলনের সঙ্গে নতুন
প্রজন্ম দলে দলে যোগ দিলে সবার ভুল ভাঙে। রাস্তায় গণজোয়ার নামেনি; কিন্তু ঘরে,
আড্ডা-আলোচনায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইন্টারনেটের জগতে, ফেসবুকে, ব্লণগে তুমুল জোয়ার
উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। তরুণরা ইতিহাসের দায় থেকে মু্িক্তর জন্য
স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জানিয়েছে। শহীদ জননী জাহানারা
ইমামের গণআদালতের পর আবারও একই দাবিতে
সোচ্ছার হয়েছ মানুষ। ‘বিচার চাই’ বলে শতকন্ঠে সরব হয়েছে সকলে। আর
দাবির পক্ষেই তরারা ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। আশার কথা, আওয়ামী লীগ সরকার নানাভঅবে
তাদের এ দায়িত্বের কথা স্বীকার করেছে। বিচার প্রক্রিয়া শিগগির শুরু হবে বরে আশা
করছে মানুষ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান
ও তার আত্মীয়-পরিজনকে হত্যার ঘটনা জাতির কপালে কলঙ্কতিলক হয়েছিল এতকাল। মহাজোট
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিচারের বাধা দূর করেছে। বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা
মামলার। আশা করা যায়, জেল হ্যা মামলাসহ সব হত্যা-ষড়যন্ত্রের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া
ও শুরু হবে। আশার পাশেই আশঙ্কার বসতি। পিুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে সরকার। তা
সত্ত্বেও জনগণের দাবি অনুসারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে এবং
স্বাধীনতাবিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলতে গিয়ে সরকার নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারের
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা নানা আশঙ্কার কথা বলছেন। প্রায়ই তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের সজাগ দৃষ্টি রাখা আজ সময়ের দাবি। একটি প্রগতিশীল,
জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে সবাইকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। হাতে হাত রেখে
ইতিহাসের দায় শোধ করতে হবে। ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’ যে অগণিত প্রাণ বলি হয়েছে, তাদের
স্মরণ করার দিন আজ। শোক, স্মুতি, গৌরব ও ইতিহাসের সমুজ্জ্বল পুষ্ঠাগুলোর দিতে
তাকানোর পাশাপাশি মুক্তি ও স্বাধীনতার মর্মবাণীকে উপলদ্ধি করার দিনও আজ। বলা হয়,
যতদিন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, প্রগতিশীলতা, অবাধ মতপ্রকাশ, অপরের মতের প্রতি
শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সগযোগিতা, বৈষম্যহীনতা, দেশপ্রেম আমাদর স্বাভাবিক সংস্কৃতিক
হয়ে উঠছে না, ততদিন মুক্তিযুদ্ধের মর্ম অনুপলদ্ধির মধ্যেই থেকে যাবে। মু্িকত ও
স্বাধীনতা থাকবে অধরা। এবার বিজয়ের মাসুজড়ে তাই শুভ ও মঙ্গলের আলো জ্বলুক বালার
দশদিগন্তে। স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে পড়–ক সর্বত্র। আজ মুক্তিযোদ্ধা দিবস।
মুক্তিযোদ্ধারের স্মরণ করে, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে যে মাসটির সূচনা হলো, সে মাসটি সফল
হোক। সফল হোক বাংলাদেশের অভ্যুদয়। প্রতিষ্ঠিত হোক উদার, সহনশীল-বৈষম্যহীন
বাংলাদেশ, য াছিল মুক্তিপাগল লড়াকু মানুষেল আকাঙ্কা।
বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি
আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস।
দিবসটিকে সামনে রেখে বিভিন্ন সংগঠন মাসজুড়েই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শুধু ঢাকা
মহানগর নয়, দেশব্যাপি এসব কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পাল করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন
সংগঠন উদ্যোগ নিয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হচ্ছে এসব কর্মসূচি। সিপিবি গত
মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় মুক্তাঙ্গণে সমাবেশে ও মিছিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের
কমিউনিষ্ট পার্টির (সিপিবি) মাসব্যাপি বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
জেলা-উপজেলাসহ সর্বত্র সভা, সমাবেশ, মিছিল কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হবে।
যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার, ‘৭২-এর সংবিধানের মূল ভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং
সাম্প্রদায়িকতা-সাম্রাজ্যবাদ-লুটপাটতন্ত্র প্রতিরোধের দাবিতে দেশব্যাপি এ কর্মসূচি
পালন করবে তারা। আওয়ামী যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায়ের প্রতি সন্তোষ
প্রকাশ করে গত মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ১৮
ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধুর ভবনে
গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনকের
মাজারে কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ বিজয় দিবসের প্রথ
প্রহরে তারা ধানমন্তিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি গত
মঙ্গলবার ৮টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে
মুক্তিযোদ্ধা দিবস-এর কর্মসূচি শুর হবে। সকাল সাড়ে ৮ টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের
শিখা চিরন্তনে এবং সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুর শহীদ বৃদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন
মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।