শহরে এখনও ঘেঁষতে পারেনি সৌরবিদ্যুৎ


যাত্রা শুরুর পর দীর্ঘ সময়েও দেশে তেমন এগোয়নি পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি। ঘন ঘন লোডশেডিং এর মধ্যেও শহরে ঘেঁষতে পারেনি এ প্রযুক্তি। যদিও একটি সোলার প্যানেলের দাম জেনারেটর বা আইপিএস এর কাছাকাছি। এ অবস্থায় বিকল্প জ্বালানির সবচেয়ে সহজলভ্য এ খাতের প্রসারে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে গত নব্বইয়ের দশক থেকে গ্রামীণ শক্তিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানির এ প্রযুক্তি জনপ্রিয় করার চেষ্টায় আছে। তবে এটা এখন পর্যন্ত কিছু গ্রামীণ এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শহরে দেখা মেলে না বললেই চলে। গ্রামীণ শক্তির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীপাল চন্দ্র বড়�য়া  বলেন, "সে সময় বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতে পারতেন না যে একটি সৌর প্রযুক্তি পুরো পরিবারের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তবে বর্তমানে সে ধারণা কম-বেশি অর্জিত হয়েছে।" বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ চালুর অন্যতম অগ্রপথিক গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তি ১৯৯৬ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি স্থাপনের প্রাথমিক সমস্যা ছিলো তার দাম, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের মাঝে সৌরবিদ্যুতের প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেয় গ্রামীণ শক্তি। এজন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু করে তারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররাও সোলার প্যানেলকে নতুন ভবনের জরুরি জ্বালানি চাহিদা মেটানোর এক ভাল বিকল্প হিসেবে নিতে পারেন।  নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মালিক হারুন-উর রশিদ বলেন, "নিত্যদিনকার লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ ঘাটতির মধ্যে একটি সুবিধাজনক বিকল্প হিসেবে আমি বেছে নেব সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কারণ সোলার প্যানেলের দাম গড়ে জেনারেটর বা আইপিএস এর সমান।" গ্রামীণ শক্তির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে, বিশেষত জাতীয় গ্রিডের সরবরাহ নেই, এমন প্রত্যন্ত এলাকায় এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার সোলার সিস্টেম ইউনিট বিক্রি হয়েছে। দীপাল বড়�য়া বলেন, "মানুষ প্রথমে প্রযুক্তিটি সম্পর্কে শুধুই কৌতুহলী ছিল। তবে ধীরে ধীরে তারা এমন সুবিধাজনক একটি জ্বালানি ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। "১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে আমরা মাত্র ১০ হাজার সিস্টেম স্থাপন করেছিলাম। এটা যথেষ্ট না হলেও
আমাদের এ বিশ্বাস জন্মেছিল যে সম্ভাবনা আছে।" ২০০৩ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ (আইডিসিওএল) সৌরবিদ্যুৎ খাতে অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়ার পর এ খাতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইডিসিওএল'র সমর্থন সত্যিকারভাবেই কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ শক্তি বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ হাজার ইউনিট বিক্রি করছে বলে জানান দীপাল বড়�য়া। "তবে এখনও অনেক পথ বাকি। যথাযথ সমর্থন পেলে এ শিল্প আরও বিশাল আকারে বেড়ে উঠতে পারে", বলেন তিনি। দীপাল বড়�য়া জানান, অর্থায়নের আইন ও প্রক্রিয়ায় সমস্যা রয়েছে। যেসব এলাকায় জাতীয় গ্রিডের সরবরাহ নেই, আইডিসিওএল শুধু সেই সব এলাকার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করে। "এটা উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে একদিক থেকে ভাল। তবে বাস্তবে শহর এলাকাকে এর বাইরে রাখার কোনো মানে বা যুক্তি নেই", বলেন তিনি। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মালিক হারুন উর রশিদ বলেন, "এমন ব্যয়বহুল জিনিসের জন্য বাজার তৈরি করা প্রয়োজন। আর সা�প্রতিক বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে আইপিএস ও জেনারেটর বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় কোনও সন্দেহ নেই যে, বিদ্যুৎ সঙ্কটে থাকা শহরের মানুষের ভোগান্তি কমাতেও সাহায্য করতে পারে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা।" পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত না হওয়ায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমবে। আর ব্যাটারি বদলানোর প্রয়োজন না থাকায় এ প্রযুক্তি মূল্যসাশ্রয়ীও। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে এখনো উচ্চমূল্যের। ৫০ ওয়াটের একটি সোলার সিস্টেমের দাম ২৭ হাজার টাকা। এটা দিয়ে চারটি বাতি ও একটি সাদা-কালো টেলিভিশন চালানো সম্ভব। তবে এ দাম গ্রামের পরিবারের জন্য খুবই বেশি। তবে গ্রামীণ শক্তি গ্রামবাসীর জন্য ৩৬ মাসে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছে। এটা এ প্রযুক্তির বিক্রি বাড়ার পেছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গ্রামের মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে হলেও শহরের লাখ লাখ লোক তা কিনতে সক্ষম। আর শহরের অনেকে নগদ অর্থেই তা কিনতে সক্ষম। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে গ্রামীণ শক্তির মতো আরও ১৫ টি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে আইডিসিওএল। তবে একে জনপ্রিয় করতে এসব সংস্থাকে শহর ও শহরতলীতে তাদের তহবিল স্কিম ছড়িয়ে দিতে হবে। "শিল্পটিকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলে যারা কিনতে সক্ষম তাদের সবার কাছে বিক্রি করা খুবই প্রয়োজন", বলেন দীপাল চন্দ্র বড়�য়া। লাভ আসতে শুরু করলে আরও অনেকেই এ ব্যবসায় আসতে আগ্রহী হবে এবং প্রতিযোগিতা বাড়লে দামও কমবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বাইরে থেকে আমদানি করতে হওয়ায় সোলার প্যানেলের দাম বেশি।" "সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমরা যে সোলার প্যানেল ব্যবহার করি তা জাপান থেকে আমদানি করতে হয়। অন্যান্য জিনিস স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়", বলেন বড়�য়া।  সোলার প্যানেলের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রত্যাহার করা হলে এ খাত দ্রুত বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। 

 

Copyright © 2009 by Your News, Your Site and Mirror Of Lakshmipur,