
এক সময় লক্ষ্মীপুর জেলায় উপকূলীয় মেঘনা নদীর সুস্বাধু ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ছিল। বর্তমানে মেঘনা নদীতে নানা কারণে ইলিশের সেই বন্যা না থাকলেও এখনো প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ইলিশ ফেনী কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে। অপর দিকে জেলার চরাঞ্চল এক সময় ধানের ভান্ডার হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তির অভাবে দিন দিন তার সেই গৌরব ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চল সয়াবিন চাষে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। সমগ্র দেশে উৎপাদিত সয়াবিনের প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদন হচ্ছে লক্ষ্মীপুর জেলায়। জেলার চরাঞ্চলের মাটিতে প্রচুর পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদিত হওয়ায় সয়াবিন চাষে কৃষকরা দিন দিন উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চল বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর ও ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চল তথা টুমচর, কালিরচর, শাকচর, ভবানীগঞ্জ, ধর্মপুর, চরমনসা, চরভূতি, চরভুতাসহ বেশ কিছু এলাকায় সবজি চাষে স্থানীয় কৃষকদের জীবন চিত্র পাল্টে দিতে শুরু করেছে। এ এলাকায় বর্তমানে শশা, লাউ, মূলা, শিম, ফুল কপি, বাধা কপি ব্যাপক ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদিত শশা এবং লাউ লক্ষ্মীপুর জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হচ্ছে। শশা, লাউ, কপি, শিম, মূলা অতিমাত্রায় উৎপাদন হওয়ায় বর্তমানে এ জেলায় সবজি আমদানি ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এক সময় কুমিল্লা থেকে শশা, লাউ, মূলা, কপি, শিম আমদানী করতে হত। লক্ষ্মীপুর জেলাবাসী উল্লেখিত সবজির জন্য কুমিল্লার উপর নির্ভর করতে হত। বর্তমানে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সবজি রপ্তানী করতে সম হওয়ায় অনেকেই সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ওই এলাকাকে দ্বিতীয় শস্য সম্ভার বলে অভিহিত করে থাকেন। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চলের প্রতি কেজি শশা ৭ থেকে ৮ টাকা, প্রতিটি বড় লাউ ২০ থেকে ২২ টাকা, প্রতিকেজি দুন্দুল ১০ টাকা ও তার চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চলে ৪শ হেক্টর জমিতে শশা, ১০০ হেক্টর জমিতে লাউ, ৫০ হেক্টর জমিতে দুন্দুল চাষ করা হয়েছে। সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা সবজি চাষের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। সবজি চাষ লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জীবন যাত্রার মান বদলাতে শুরু করেছে। ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের যুব কৃষক মোহাম্মদ হোসেন জানান, গত বছর সে মাত্র ৬ শতাংশ জমিতে শশা চাষ করে ৫৪ হাজার টাকার শশা বিক্রি করেছে। তার নিট লাভ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমান বছরে প্রায় ১ একর জমিতে শশা চাষ করেছে। তার দেড় থেকে ২ লাখ নিট লাভ হবে বলে সে জানায়। গত বছর সে একই জমিতে লাউ চাষ করেনি। বর্তমান বছরে সে বেশ কিছু লাউ চাষ করেছে। তার ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন। বর্তমান সময়ে ঔষধ ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের লাভ কম হচ্ছে। সে জানায়, সরকারি ভাবে যদি এ অঞ্চলের কৃষকদের বীজ ও সার সরবরাহ করা হত তাহলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। কৃষকরা চাষাবাদে উৎসাহ পেত। সে আরো জানায়, চরাঞ্চলে পানি কম হওয়ায় এবং হাইব্রীড জাতীয় শশা চাষ করার পর ফলন পেতে সময় কম লাগায় মানুষ শশা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।