১০ কৃষকের সয়াবিন লুট, চরে চলছে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস রায়পুরে ৫টি চরে লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচারে কৃষক অতিষ্ঠ


লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ৫টি চরে লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচারে কৃষকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। লাঠিয়াল বাহিনী আবাদকৃত সয়াবিনের ৩ ভাগের ১ ভাগ দাবি করছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। অন্যথায় জমিতে থেকে সয়াবিন কাটতে না দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০ কৃষকদের মাঠের সয়াবিন লুট করে নিয়েছে তারা। এ নিয়ে কৃষকরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে চরকাছিয়ার ফারুক ও কানিবগার বেলায়েতসহ অসংখ্য কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর খেয়ে না খেয়ে যে জমিতে সয়াবিন চাষ করেন, আর সে জমির সয়াবিন পাকলে লাঠিয়াল বাহিনী কেটে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে মাথার রক্ত ঝরে। সবসময়ই মতাসীন দলের নেতারা চরগুলো নিয়ন্ত্রন করে। গত জোট সরকারের আমলে চরের কৃষকের বন্দোব¯Í নেয়া জমির সয়াবিন ও ধান লুটসহ নানাভাবে হয়রানির করে বিএনপি যুবদরের নেতারা। মতার পালাবদলের পরপরই স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতারা চরের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন। ইতোমধ্যে ৮নং চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যঅন আব্দুর রশিদ মোল্লার ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন মোল্লা এবং তার ছোট ভাই যুবলীগ নেতা মনির হোসেন মোল্লা চরকাছিয়া, কানিবগার চর ও টুনুর চর নিজেদের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন। লাঠিয়াল বাহিনী কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত ফসলের ৩ ভাগের ১ ভাগ দাবি করেছেন। এ ফসল না দিলে চর থেকে লাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে বলে তারা হুমকি দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষি স¤প্রসারন অফিস সুত্রে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া, কানিবগার চর, টুনু চৌধুরীর চর, চরঘাসিয়া ও চরজালিয়ার এবার ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হয়। প্রতি একরে গড়ে ২০ মন সয়াবিন উৎপাদন হয়। বর্তমানে প্রতিমন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০০০ টাকা। ওই চরগুলোতে সয়াবিনের ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে এখানে ১০-১৫ শতাংশ সয়াবিন কাটা হয়েছে।
টুনুর চরের কালাম মাঝি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, কয়েকদিন আগে সে চরে উ/পাদিত ৭ হাজার টাকার সয়াবিন বিক্রি করেন। সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত ৩ ভাগের ১ ভাগ ফসল না দেয়ায় তার কাছ থেকে পুরো ৭ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে যায়। পরে কান্নাকাটি করলে স্থানীদের সমঝোতায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। টাকা নেওয়া ব্যাক্তির পরনে দামি প্যান্ট-শার্ট ছিল। তার নাম জানেন না, দেখলে চিনবেন। তবে মোট সাইকেল নিয়ে চাঁদা আনত তারা চর এলাকায় আসেন বলেও তিনি জানান।
চরল²ী জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক আ ট ম সেলিক বলেন, কানিবগার চরে আমার ৫ একর জমি আছে। ওই জমিগুলো স্থানীয় এক কৃষককে বর্গা দিয়েছি। গত রোববার জাকির হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন লাঠিয়াল সয়াবিনগুলো লুট করে নিয়ে যায়।কৃষকের অভিযোগ, সয়াবিন ও ধানের মৌসুমে প্রতিবছর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে কোন পদপে নেয়া হচ্ছে না। এবার তারা ব্যাপক রক্তয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন। ফসল লুট ও সংঘর্ষের আশংকায় চরের মানুষ নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের মমদ থাকা এ চক্রটি বিনা বাধায় বছরের পর বছর ধরে চালাচ্চে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। গত এক সপ্তাহে কানিবগার কৃষক ইছমাইল হোসেন, চরল²ীর মনির সরদার, চরকাছিয়ার দুলাল, নুরনবী, মো¯Íফা, টুনুর চরের করিম ও কামালের জমির সয়াবিন কেটে নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, এবারের চেয়ে আর কখনো চরে এতোবেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। চরে চলেছে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস।স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের একরোখা নীতির কারণে চরের ভূমিহীন ও সাধারন কৃষকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে অর্থনৈতিকসহ নানা হয়রানি শিকার হতে হয় কৃষকদের। হাজীমারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমানের যোগসাজসের কারণ্ইে চরে এবার সন্ত্রাসী তৎপরতা বেশি।
যোগাযোগ করা হলে, এস আই সফিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কৃষকদের সয়াবিন সংক্রান্ত ২৪টি অভিযাগ সমাধান করছি। চরের সয়াবিন লুট ঠেকাতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ৮নং চরবংশী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, সয়াবিন লুট করা বা চাঁদা আদায়্রে সাথে আমি এবং আমার ভাই মনির জড়িত নেই। কিছু লাঠিয়াল আমাদের নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করেছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরোজ কুমার নাথ বলেন, কৃষকদের উৎপাতি সয়াবিন কৃষকরাই নিবেন। অন্য কেউ আনতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

 

Copyright © 2009 by Your News, Your Site and Mirror Of Lakshmipur,