ভূমি সংস্কার বোর্ডের আওতাধীন ভাওয়াল রাজ এস্টেটের তালিকাভুক্ত ৬০, উত্তর ধানমন্ডির ১ একর ৫৪ শতাংশের বাগানবাড়িটি রাতের আঁধারে হাত ছাড়া হয়ে গেছে। প্রায় ৫০ কোটি টাকার এ সরকারি সম্পত্তিটি রহস্যজনকভাবে বেদখল হয়ে যাওয়ার পর এস্টেটের পÿ থেকে একটি সাধারণ মামলা করা ছাড়া তেমন আর কোন কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড নামে একটি ডেভলপার কোম্পানি বাড়ির চারদিকে নিরাপত্তা বেস্টনি দিয়ে উন্নয়ন কাজ করছে। বাড়ির অভ্যন্তরে অবস্থিত বিশাল পুকুরটি ইতিপূর্বে ভরাট করা হচ্ছে। জানা যায়, ভাওয়ালের রাজপরিবার ধানমন্ডি এলাকাবাসীর পানীয়জলের অভাব বিমোচনের জন্য পুকুরটি খনন করেছিলেন। কিন্তু দখলের সাথে সংশিøষ্টতার কথা অস্বীকার করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের পÿে আইন উপদেষ্টা খলিলুরন রহমান বলেন, বৈধ চুক্তি অনুযায়ী বাড়ির উন্নয়ন কাজ করার জন্য তাদেরকে সাদেক খান গং বাড়িটি বুঝিয়ে দিয়েছে। ভাওয়াল রাজ এস্টেট সূত্রে জানা যায়, রাজাবাজার মৌজার সিএস ২ নম্বর খতিয়ানের সিএস ১৬৩ নম্বর দাগের ৬০ উত্তর ধানমন্ডির বাগান বাড়িটি ভাওয়াল রাজ পরিবারের নিজস্ব সম্পত্তি। রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত জমির মালিক উক্ত পরিবারের ছোট কুমার শ্রী রবীন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। ১৯৯২ খ্রীস্টাব্দে তাদের পুরো জমিদারি এস্টেটটি পরিচালনার ভার কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে ন্য¯Í হয়। এর ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার সমুদয় জায়গা জমি পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু তাদের ব্যর্থতা ও কর্তব্য কাজে শৈতিল্যতার কারণে এস্টেটের সিংহভাগ সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যায়। অবৈধ দখল এবং পরবর্তীকালে এস এ, আর এস রেকর্ড এবং নামজারিসহ খাজনা প্রদানের ÿেত্রে দখলদারদের প্রাধান্য থাকার কারণে ভাওয়াল রাজ এস্টেট তা পুনরুদ্ধারে নানা ঝামেলার সম্মুখিন হয়। মামলা ও রীট জটিলতা এÿেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি ঘটনা প্রবাহে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দে ৬০, উত্তর ধানমন্ডির ভাওয়াল রাজ এস্টেটের বাড়িটি আবদুল খালেক গংদের হাতে চলে যায়। ১৯৫৫-৬২ খ্রীস্টাব্দে প্রণীত এস এ রেকর্ডে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের পরিবর্তে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭৪-৮৮ খ্রীস্টাব্দ প্রনীত আর এস রেকর্ডে তা আব্দুল খালেকের ছেলে সাদেক খান গংদের নামে রেকর্ডভুক্ত হলেও হালে অর্থাৎ ১৯৯৮-২০০৬ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত পরিচালিত মহানগর জরীপে বিবাদ ও আপিল মামলার প্রেÿিতে তা পূর্বের মালিক ভাওয়াল রাজ এস্টেটের নামে রেকর্ড প্রনীত হয়। যার কারণে সাদেক গংদের নামজারি বাতিল এবং খাজনা নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, সরকারি এ সম্পত্তি সম্পূর্ণ বৈধভাবে ১০ মার্চ ২০০৫ খ্রীস্টাব্দ এস্টেট গ্রহণ করে। দখল বজায় রাখার জন্য ডিগনিটি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রা: লি: এর ১১ জন নিরাপত্তা কর্মিকে সেখানে সার্বÿণিক নিয়োগ দেয়া হয়। ভ‚মি সংস্কার বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন বেদখল হয়ে থাকা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার জমি উদ্ধার করতে গিয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। উদ্ধার অভিযান, স্থাপনা নির্মাণ, নিরাপত্তা কর্মিদের বেতন-ভাতা, ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও রÿণাবেÿণ ব্যয় বাবদ এ অর্থ খরচ করা হয়। অথচ গত ৩১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ খ্রীস্টাব্দ রহস্যজনকভাবে বাড়িটি উচ্ছেদকৃত মালিক সাদেক খান গংদের পÿে ইস্টার্ন হাউজিং কোম্পানি দখল করে নেয়। এ খবর পেয়ে এস্টেটের তহশিলদার আব্দুল মান্নান চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সম্পত্তি রÿায় নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মিদেরকে খুঁজে পাননি। তিনি জানান, ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর এ দু’দিনব্যাপী অবৈধ দখলদাররা এস্টেটের নির্মিত স্থাপনা ভেঙে লুটপাট চালায় এবং বাড়িটি দখল করে নেয়। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে এস্টেটের ম্যানেজার আবদুর রউফ বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় একটি মামলা করেন। ধানমন্ডি থানা পুলিশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি বলে জানা যায়। এস্টেট সূত্রে জানা যায়, অনেক পীড়াপীড়িত পর ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ খ্রীস্টাব্দে পুলিশ প্রগরায় সে বাড়িতে গিয়ে ২টি টিনের ঘর নির্মাণ করে ১০ জন আনসার বসানো হলেও তা টিকিয়ে রাখা যায়নি। পুলিশের অসহযোগিতা এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের যোগসাজশের কারণে হঠাৎ করেই আনসার বাহিনী সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ ব্যাপারে সাদেক খানের পÿ থেকে বলা হয়েছে জমিটি ভাওয়াল রাজ এস্টেটের আওতাভুক্ত হলেও পরবর্তীতে রেজিস্ট্রি পাট্টা কোর্ট অব ওয়ার্ডের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন হাত বদল হয়ে তা আব্দুস খালেকের হাতে আসে। তার কাছ থেকে জানা যায়, ৬০ উত্তর ধানমন্ডির এ বাড়িটি নিয়ে সাদেক খান গং এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের মধ্যে উচ্চ আদালতে ২টি, সেশন জজ কোর্টে একটি এবং দেওয়ানি ফৌজদারি আদালতে একটি মামলা চললেও এর কোনটার নিষ্পত্তি হয়নি। অথচ ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৬ খ্রীস্টাব্দে ধানমন্ডি থানা পুলিশের সহযোগিতায় দখল হয়ে যায়। দু’পÿের আবেদনে উচ্চ আদালত কর্তৃক একে অপরের বিরুদ্ধে স্থিতি অবস্থা জারি ও এর বিরুদ্ধে আপিল এবং অন্যান্য কোর্টে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভাওয়াল রাজ এস্টেটের সম্পত্তি দখল করে নেওয়াকে আদালত অবমাননাকর হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এস্টেটের প্যানেলভুক্ত আইনজীবি আব্দুস সাত্তার। তিনি আরো জানান, সি এস রেকর্ড, হালজারিরা এবং কোর্ট অব ওয়ার্ডসের আইন মোতাবেক ওই সম্পত্তির মালিক ভাওয়াল রাজ এস্টেট। উক্ত রেকর্ড, নামজারি এবং কোর্ট অব ওয়ার্ডসের আইন পরিবর্তন না করে কেউ সে সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন না। জানা যায়, সাদেক খান গং থেকে একটি চুক্তি মুলে বাড়ির মালিকানা দাবিদার এবং দখলদার হলো ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড। বর্তমানে সেখানে তারা বহুতলা ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় তাদের হাত থেকে কেন বাড়িটি উদ্ধার করার জন্য ভাওয়াল রাজ এস্টেট কোন প্রদÿেপ গ্রহণ করছে না, সে ব্যাপারে তদন্ত করে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ভ‚মি সংস্কার বোর্ডের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মোর্তুজা হোসেন মুন্সীর পরোÿ সহযোগিতায় ধানমন্ডির ১০০ কোটি টাকার বাড়িটি হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক দখল হয়েছে বলে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান। এর সপÿে তারা যুক্তি দেখান, প্রথম দিকে ১৪ লাখ টাকা খরচ করে ভ‚মি সংস্কার বোর্ডের শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারি এবং আনসার পুলিশ সহযোগে বাড়িটি পুনরুদ্ধার করা হলেও বর্তমানে পুনরায় দখল হয়ে যাওয়া বাড়ি উদ্ধারের ব্যাপারে এস্টেটের এতো নিরব ভ‚মিকা কেন? এ ব্যাপারে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, ঘটনার প্রেÿিতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অচিরেই তা পুনরুদ্ধারের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের আইন উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ভাওয়াল রাজ এস্টেট আইনের তোয়াক্কা না করেই একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার ছায়ায় থেকে একটি সাধারণ পরিবারকে হয়রানি করছেন। বাড়িটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পেছনে নিরাপত্তা বিধানকারী প্রতিষ্ঠান ডিগনিটি সিকিউরিটি সার্ভিসেসে প্রা: লি: এর ভ‚মিকা নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও এস্টেটের পÿ থেকে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তারা সরকারি সম্পত্তিটি দখলদারদের হাতে তুলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কেন চলে গিয়েছিল, সে ব্যাপারে তদন্ত হলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এদিকে এস্টেট সূত্রে জানা যায়, সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মি নিয়োগের সময় এস্টেটের সাথে তাদের কোন লিখিত চুক্তি হয়নি বলেই তারা অনৈতিক কাজটি করতে পেরেছেন। এ জন্য দখলদারদের সহযোগী হিসাবে তাদেরকে আসামীর কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো উচিত বলে অভিমত দে আইনবিদরা। ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভ‚মি সংস্কার বোর্ডের অধীনস্থ ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ১০০ কোটি টাকার জমি দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও স্থিতি অবস্থা রাখার নির্দেশ থাকা সত্তে¡ও কিভাবে ইস্টার্ন হাউজিং স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন। তবে কি ইস্টার্নের ÿেত্রে আইন বলতে কিছু নেই।
Browse » Home » » ১০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দখলে