নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব সিইসির

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা। ইসি সচিবালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে দুই নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং এম সাখাওয়াত হোসেনের প্রশ্ন তোলার প্রেক্ষাপটেই সিইসি সরকারের কাছে এ প্রস্তাব দিলেন। ইসি সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ এককভাবে সিইসির কাছে নয়, নির্বাচন কমিশনের হাতে অর্পণের জন্য আইন সংশোধনের মত স¤প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন দুই নির্বাচন কমিশনার। শামসুল হুদা চান, সচিবালয়ের ওপর সিইসির একক কর্তৃত্ব নিয়ে যেন আর প্রশ্ন না ওঠে, তা সংবিধানেই সুস্পষ্ট করে দেওয়া হোক। এ লক্ষ্যে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. আব্দুল আজিজের কাছে গত ১২ মে 'নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের সংশোধনী প্রস্তাব' লিখিতভাবে পাঠান সিইসি। ১৭ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ইসির প্রস্তাবের বিষয়টি জেনেছি। তবে এখনও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।"সিইসির কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, "এটা নিয়ে এখন আমি কোনও কথা বলব না।"সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের চতুর্থ ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে এবং কেবল এ সংবিধান ও আইনের অধীন হবে।নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইনের ৫ ও ১৪ ধারায় ইসি সচিবালয়ের কর্তৃত্ব সিইসির ওপর অর্পণ করা হয়েছে। এতে আপত্তি দুই নির্বাচন কমিশনারের। তারা বলছেন, এ আইনের এ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সিইসিসহ কমিশনারদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন। তাই সিইসির একক কর্তৃত্ব ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য আইন সংশোধনের পক্ষে মত দেন তারা। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে শামসুল হুদা সংবিধানেই সিইসির একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করলেন। সিইসির সুপারিশে বলা হয়, ইসির কাজের ৯০ শতাংশই কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়। বাকি ১০ ভাগ প্রশাসনিক কাজ সিইসির নিয়ন্ত্রণে সচিবের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। প্রশাসন পরিচালনা ও সমন্বয়ের স্বার্থে ইসি সচিবালয়ে একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত কমিশনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় কিংবা প্রয়োজনীয় নয়। সিইসি সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়-এর নিয়ন্ত্রণ এককভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর দেওয়ার উপধারা সংযোজনের সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আরো সুনির্দিষ্ট করার সুপারিশ করেছেন তিনি। ইসি সচিবালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে গত কয়েক মাসে সংবাদ মাধ্যমে কমিশনারদের মত প্রকাশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আসছেন সিইসি। তাই সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে বিতর্কের ইতি টানতে চান সিইসি। শামসুল হুদা মনে করেন, ইসি সচিবালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে একক কর্তৃত্ব আবশ্যকীয় বিবেচনা করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন-২০০৯ এ সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণ এককভাবে সিইসির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আইনে সুস্পষ্ট থাকলেও নির্বাচন কমিশনাররা তা মিডিয়ায় তুলে 'অহেতুক ও অনাকাক্সিক্ষত বিতর্কের সূত্রপাত করছেন। যে কারণে কমিশনের ভাবমূর্তিই শুধু নয়, কাজের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। সংবিধানে কমিশন সচিবালয় ও এর পরিচালনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান না থাকায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে সিইসির প্রস্তাবে বলা হয়, "যেহেতু সরকার সংবিধানের কিছু কিছু সংশোধনী সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন, সেহেতু এই সুযোগে কমিশন সচিবালয় সংক্রান্ত কতিপয় উপধারা সংবিধানে সংযোজন করলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।" ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে ফেব্র"য়ারি মাসে এটিএ শামসুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এরপর ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অধ্যাদেশ, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনী আইন সংস্কার, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করে বহু প্রতীক্ষিত নবম সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এই কমিশনের অধীনে হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রণীত ইসি সচিবালয় অধ্যাদেশটি বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশনেই পাস হয়। তবে অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় এ নিয়ে মতামত নেওয়া হলেও তখন এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের আপত্তি তুলতে দেখা যায়নি।
 

Copyright © 2009 by Your News, Your Site and Mirror Of Lakshmipur,