ঘুর্ণিঝড় আয়লা'র আঘাতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় এলাকায় শিশুসহ ৬ জন নিহত- সহস্রাধিক বাড়িঘর প্লাবিত

পাঁচজনের মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এর মধ্যে ভোলার চরফ্যাশনে তিন জন, পটুয়াখালীর বাউফলে এক ও গলাচিপায় একজন মারা গেছেন। সোমবার দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভার পর প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিভার সদস্যদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। -খবর নোয়াখালী ওয়েবঅপরদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার গজারিয়া দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘর ভেঙ্গে মারা গেছে ১০ বছরের এক শিশু। খুলনা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় 'আইলা'। দুপুর ২টার পরপরই এটি খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীর বিস্তির্ণ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এর প্রভাবে এসব এলাকায় প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে আট থেকে নয় ফুট উঁচু জোয়ার আছড়ে পড়ছে উপকূলে। রাত ৮টার মধ্যে 'আইলা' পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার গজারিয়া দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘর ভেঙ্গে মারা গেছে ১০ বছরের এক শিশু। আহত ১০। পটুয়াখালীর বাউফলে কালাইয়া ইউনিয়নে করপুরকাঠি গ্রামে আব্দুল আজিজ মল্লিক নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ গাছ চাপায় মারা গেছেন। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল। দুপুর দুইটা থেকে খুলনা উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় আয়লা। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এখানে আট থেকে নয় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হুমকির মুখে শহর রক্ষা বাঁধ। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সব চিংড়ি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। এর প্রভাবে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে মংলা সদর। বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে এ অঞ্চল। কয়রা উপজেলার বেড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে ১৫ টি গ্রাম। অবিরাম বৃষ্টি আর থেমে থেমে দমকা হাওয়া চলছে পটুয়াখালী উপকূল জুড়ে। স্বাভাবিকের চেয়ে দশ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চল। শহর এলাকা বয়ে যাচ্ছে ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে। এছাড়া গলাচিপা উপজেলার মৌডুবি, চর মন্তাজ, রাঙ্গাবালি, খেপুপাড়ার ধুলেশ্বর, দেবপুর, লালুয়া এবং কুয়াকাটার খেজুরা নিজামপুর ও চেয়ারপুর বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে কমপক্ষে দশ হাজার ঘরবাড়ি। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল ব্যবস্থা। চাঁদপুরে মেঘনার পানি অস্বাভাবিক বেড়ে এরই মধ্যে ডুবে গেছে নৌ-টার্মিনালের জেটিসহ ২টি পন্টুন। এছাড়াও পটুয়াখালী জেলা শহরসহ চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ ফুট পানিতে ৭০ হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে এবং নোয়াখালির মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে ৭/৮ ফুট এবং হাতিয়ার মূল ভূখন্ডের বেড়ি বাধের বাইরে নিম্নাঞ্চল ৫/৬ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় মংলা বন্দর থেকে এটি অবস্থান করছিল মাত্র ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এর অবস্থান ছিল ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ৬ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মংলা বন্দরে ৭ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালি, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী চর এবং দ্বীপগুলি ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়। যেসব জেলা ৬ নং বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে সেগুলি হলো: কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী চর এবং দ্বীপগুলি। বরিশালসহ বিভাগের সবগুলো জেলা এবং উপকূলীয় এলাকায় মৃদু দমকা হাওয়া বইছে। সকাল আটটায় সর্বোচ্চ ৬৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় প্রায় দুই থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌ-চলাচল। জেলাগুলোতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। রবিবার থেকে বরগুনায় ভারী বর্ষণ আর দমকা হাওয়া বইছে। জেলা প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম । জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ সকল দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

Copyright © 2009 by Your News, Your Site and Mirror Of Lakshmipur,