হাছিবুজ্জামান রিয়াদ ঃ লক্ষ্মীপুরে ইটভাটা স্থাপন এবং ইট পোড়ানোতে নেই নিয়মনীতির বালাই। এ সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই যে যার মতো করে ইটভাটা স্থাপন করে যাচ্ছেন। এছাড়া মানা হচ্ছে না ইট পোড়ানোর আইন কানুনও । বাংলা চিমনির (ড্রাম কাটা পাত দিয়ে তৈরি) ব্যবহার এবং কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও প্রায় সবকয়টি ইট ভাটাতেই রয়েছে বাংলা চিমনি। অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। উজাড় হয়ে যাচ্ছে গাছগাছালি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নেই যেমন কোন মাথা ব্যাথা তেমনি এর তিকর দিক সম্পর্কেও সচেতন নয় এলাকাবাসী। ফসলী ভূমি ও জনবসতীপূর্ন এলাকায় একেরপর এক ইটভাটা স্থাপন হলেও প্রতিবাদ করছে না এলাকাবাসী। এতে করে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। ভয়াবহ পরিবেশ দুষনের পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছে চর্ম, এলার্জি, হাঁফানি, কাশিসহ নানা জটিল রোগ ব্যাধিতে। এভাবে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন এবং অবাধে কাঠ পোড়ানো অব্যাহত থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ উপকূলীয় এ জেলায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন পরিবেশবিদরা ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর এবং রামগতি উপজেলায় রয়েছে শতাধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটা স্থাপনে মানা হয়নি নিময়নীতি। পরিবেশ দূষণ রোধে ইটভাটায় ১২০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন চিমনি ব্যবহার করার কথা থাকলেও এসব ইটভাটায় মাত্র ২৫-৩০ ফুট উচ্চতার বাংলা চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের গাছ-গাছালীর পাতায় কার্বন জমে মরে যাচ্ছে গাছপালা। বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিরূপ প্রভাব ফেলছে জনজীবনেও । মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছে হাঁফানি, কাশি, চর্ম, এলার্জিসহ নানা রোগ ব্যাধিতে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে কয়লা ছাড়া কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ হলেও ইটভাটাগুলোতে জালানী হিসেবে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে উজাড় হচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের বন, বাগ-বাগিচা। এতে করে উপকূলীয় এ জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ডাল হিসেবে ব্যবহৃত গাছ-পালা ব্যাপক হারে ধ্বংস হচ্ছে। যা পরিবেশের ভারসাম্যকে করে তুলেছে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া জালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গাড়ীর টায়ার। যা পরিবেশের জন্য চরম তিকর। এদিকে ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে দিন দিন উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। এতে কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। এভাবে কৃষি জমির মাটি ইট তৈরিতে ব্যবহার হতে থাকলে জেলার অধিকাংশ কৃষি আবাদি জমি অচিরে আবাদ উপযোগিতা হারাবে বলে কৃষিবিদরা আশংকা করছেন। এদিকে ঘন জনবসতি এবং গাছপালা রয়েছে এমন এলাকা বাদ দিয়ে জনবসতিহীন চরাঞ্চল কিংবা অপোকৃত কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের কথা থাকলেও এখানকার প্রায় সব ইটভাটাই ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। সদর উপজেলার টুমচরের সনি্নকটে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত ইটভাটা সম্পর্কে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফজলুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হয় ফসলী জমি নষ্ট করে জনবসতি এলাকায় ওই ইটভাটা স্থাপনে সরকারী আইনমানা হয়েছে কি না তিনি এর কোন জবাব দিতে পারেননি। বাংলা চিমনী (ড্রাম কাটা) এর পরিবর্তে ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনী এবং কয়লা ছাড়া জ্বালানী হিসেবে কাঠ পোঁড়ানোর সরকারী নিষেধাজ্ঞার সম্পর্কে এলাকাবাসী অনেকে জানে না। তারা জানে না ইটভাটার তিকর দিক সম্পর্কেও। এদিকে ইট পোড়ানোর পোড়া বিষাক্ত ধোঁয়ার বিকট গন্ধে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে জনজীবন। কাঠ পোড়ানো প্রসঙ্গে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দিন বলেন, কয়লার দাম বেশি তাই কাঠ পোড়াতে হয়। ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার না করে বাংলা চিমনি ব্যবহার প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হলো এটি অনেক ব্যয় বহুল। অনেকের প েতা সম্ভব নয়। এছাড়া এ বিষয়ে সরকারের ওপর হাইকোর্টের ইনেজকশন রয়েছে। তাছাড়া ইট তৈরি কম এবং দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকাল প্রশাসনও এ ব্যাপারে এ্যাংকারেজ করছেন। সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন, কাঠ, টায়ার পোড়ানো এবং কৃষি জমির মাটি নেওয়া বন্ধ করা না গেলে অচিরেই ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ে নেমে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন মহলের হস্তপে কামনা করছেন।